ঢাকা , রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo ঢাকার ধামরাইয়ে সাদ হত্যা মামলায় দুই আওয়ামীলীগ নেতা গ্রেপ্তার Logo টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় নাহিদ ইসলাম Logo ধামরাই থানা ও মন্দির পরিদর্শনে মেজর জেনারেল মোঃ মঈন খান Logo ধামরাইয়ে গুলিতে নিহত সাদ’সহ অন্যান্য বীর শহীদের স্বরণে আলোচনা ও দোয়া মাহফিল Logo ধামরাইয়ে বিএনপি’র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ৮০ তম জন্মদিন ও তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দাবিতে বিশাল সমাবেশ Logo রাষ্ট্রের সাথে প্রতারণা, শাস্তি পাবেন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা : ফারুক-ই-আজম Logo চট্টগ্রামে শেখ হাসিনা-নওফেলসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা Logo সম্প্রতি শেরপুরে বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু Logo ডাটা সেন্টারে আগুনের সাথে ইন্টারনেট বন্ধের কোন সম্পর্ক ছিল না : প্রতিবেদন Logo মিয়ানমারে যুদ্ধাপরাধ বাড়ছে : জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন

সাভারে ২৪ ঘন্টার মধ্যে চাঞ্চল্যকর হনুফা হত্যার রহস্য উদঘাটন, গ্রেপ্তার ১

সাভারে ২৪ ঘন্টার মধ্যে চাঞ্চল্যকর হনুফা হত্যার রহস্য উদঘাটন, গ্রেপ্তার ১

ঢাকার সাভারে একটি বোতামের সূত্র ধরে চাঞ্চল্যকর হনুফা আক্তার হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। সেইসাথে হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা নিহতের সহোদর ভাই মোহাম্মদ আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) বেলা ১২টায় সাভার মডেল থানায় এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এসব তথ্য জানান ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম, অপস্ এন্ড ট্রাফিক- উত্তর) মো. আব্দুল্লাহিল কাফি। 
এর আগে, গত বুধবার (১২ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের বাগ্নিবাড়ি ফকির পাড়া এলাকায় হনুফা আক্তারের নিজ ঘর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের স্বামী হারুন অর রশিদ তুষার বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-৪৪)।
গ্রেপ্তার আসামি মোহাম্মদ আলী।
নিহত হনুফা আক্তার সাভারের বিরুলিয়া বাগ্নীবাড়ি এলাকার বাসিন্দা। গ্রেপ্তার মোহাম্মদ আলী (৪২) তাঁর আপন ছোট ভাই। তিনি ফকিরবাড়ি এলাকার পটু ফকিরের ছেলে।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম, অপস্ এন্ড ট্রাফিক- উত্তর) মো. আব্দুল্লাহিল কাফি জানান, গত ১২ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টার দিকে স্ত্রী হনুফা আক্তারকে সুস্থ্য অবস্থায় রেখে পার্শ্ববর্তী মসজিদে তারাবির নামাজ পড়তে যান স্বামী হারুন অর রশিদ। নামাজ শেষে রাত অনুমান সাড়ে ৯টার দিকে নিজ বসতঘরে এসে দেখেন তার স্ত্রী খাটের উপর মৃত অবস্থায় পড়ে আছে। এসময় তার স্ত্রীর বাম গালের ও থুতনির নিচে নখের একাধিক আচড়ের চিহ্ন ছিল। এছাড়াও মুখ দিয়ে রক্তমিশ্রিত লালা বের হচ্ছিল ও খাটের উপর একটি বালিশ রক্তমাখা অবস্থায় ছিল। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়।
তিনি জানান, ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম, অপস্ এন্ড ট্রাফিক- উত্তর), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) এবং অফিসার ইনচার্জ সাভার মডেল থানার তত্ত্বাবধানে সাভার মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুর রাশিদ এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. দিদার হোসেন সঙ্গীয় আরো অফিসার ফোর্সসহ ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করার জন্য মাঠে নামে। ঘটনার রহস্য উদঘাটনে ঘটনাস্থলে তদন্তকারী টিম তল্লাশী করাকালে ঘরের মেঝেতে একটি বোতাম ও একটি হ্যান্ড গ্লাভসের বৃদ্ধাংগুলির অংশ বিশেষ পান। উক্ত বোতামটি নিহতের স্বামীর পরিহিত শার্টের বোতামের সাথে মিল ছিল না। বিভিন্ন কৌশলে তদন্তের একপর্যায়ে দেখা যায় হনুফা আক্তারের সহোদর ভাই মোহাম্মদ আলীর পরিহিত শার্টের একটি বোতাম ছেড়া এবং ঘটনাস্থলে প্রাপ্ত বোতামের সঙ্গে মোহাম্মদ আলীর পরিহিত শার্টের অন্যান্য বোতামের সাথে হুবহু মিল আছে। মোহাম্মদ আলীর শরীর পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় তার ডান কানের নিচে এবং নাকে হালকা নখের আচড় রয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আব্দুল্লাহিল কাফি আরও জানান, মোহাম্মদ আলীকে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তার বোন হনুফা আক্তারের হত্যার ঘটনায় সে নিজেই জড়িত মর্মে স্বীকার করে। এসময় আসামী জানায় যে, অনুমান ১২ বছর পূর্বে মোহাম্মদ আলী তার পিতা জীবিত থাকা অবস্থায় তার সমস্ত সম্পত্তি (অনুমান ২০ বিঘা) জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে রেজিস্ট্রি করে নেন। পরবর্তীতে তার পিতা কটু ফকির বিজ্ঞ আদালতে দেওয়ানী মামলা দায়ের করে উল্লেখিত জমি রায়ের মাধ্যমে ফেরত পান। অতঃপর কটু ফকির তার অনুমান ২০ বিঘা সম্পত্তি হনুফাকে ওসিয়ত দলিল করে দেন। এরপর হতে গ্রেপ্তার আসামী মোহাম্মদ আলী হনুফার অর্ধেক সম্পত্তি ফেরত দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে আসছে। এ বিষয়কে কেন্দ্র করে দীর্ঘ দিন ধরে ভাই বোনের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ ও বিরোধ চলে আসছিলো।
গ্রেপ্তার আসামী তার বোনের নিকট সম্পত্তি ফেরত না পেয়ে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১২ এপ্রিল রাত অনুমান ৭টার দিকে হনুফার স্বামী হারুন অর রশিদ তুষার তারাবির নামাজ পড়তে গেলে সেই সুযোগে আসামী মোহাম্মদ আলী তাকে তার ঘরে একা পেয়ে ধস্তাধস্তি করে খাটের উপর ফেলে ডান হাতে গ্লাভস পড়ে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার আসামীকে দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
ট্যাগস

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

ঢাকার ধামরাইয়ে সাদ হত্যা মামলায় দুই আওয়ামীলীগ নেতা গ্রেপ্তার

সাভারে ২৪ ঘন্টার মধ্যে চাঞ্চল্যকর হনুফা হত্যার রহস্য উদঘাটন, গ্রেপ্তার ১

আপডেট সময় ০৮:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৩
ঢাকার সাভারে একটি বোতামের সূত্র ধরে চাঞ্চল্যকর হনুফা আক্তার হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। সেইসাথে হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা নিহতের সহোদর ভাই মোহাম্মদ আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) বেলা ১২টায় সাভার মডেল থানায় এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এসব তথ্য জানান ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম, অপস্ এন্ড ট্রাফিক- উত্তর) মো. আব্দুল্লাহিল কাফি। 
এর আগে, গত বুধবার (১২ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের বাগ্নিবাড়ি ফকির পাড়া এলাকায় হনুফা আক্তারের নিজ ঘর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের স্বামী হারুন অর রশিদ তুষার বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-৪৪)।
গ্রেপ্তার আসামি মোহাম্মদ আলী।
নিহত হনুফা আক্তার সাভারের বিরুলিয়া বাগ্নীবাড়ি এলাকার বাসিন্দা। গ্রেপ্তার মোহাম্মদ আলী (৪২) তাঁর আপন ছোট ভাই। তিনি ফকিরবাড়ি এলাকার পটু ফকিরের ছেলে।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম, অপস্ এন্ড ট্রাফিক- উত্তর) মো. আব্দুল্লাহিল কাফি জানান, গত ১২ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টার দিকে স্ত্রী হনুফা আক্তারকে সুস্থ্য অবস্থায় রেখে পার্শ্ববর্তী মসজিদে তারাবির নামাজ পড়তে যান স্বামী হারুন অর রশিদ। নামাজ শেষে রাত অনুমান সাড়ে ৯টার দিকে নিজ বসতঘরে এসে দেখেন তার স্ত্রী খাটের উপর মৃত অবস্থায় পড়ে আছে। এসময় তার স্ত্রীর বাম গালের ও থুতনির নিচে নখের একাধিক আচড়ের চিহ্ন ছিল। এছাড়াও মুখ দিয়ে রক্তমিশ্রিত লালা বের হচ্ছিল ও খাটের উপর একটি বালিশ রক্তমাখা অবস্থায় ছিল। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়।
তিনি জানান, ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম, অপস্ এন্ড ট্রাফিক- উত্তর), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) এবং অফিসার ইনচার্জ সাভার মডেল থানার তত্ত্বাবধানে সাভার মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুর রাশিদ এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. দিদার হোসেন সঙ্গীয় আরো অফিসার ফোর্সসহ ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করার জন্য মাঠে নামে। ঘটনার রহস্য উদঘাটনে ঘটনাস্থলে তদন্তকারী টিম তল্লাশী করাকালে ঘরের মেঝেতে একটি বোতাম ও একটি হ্যান্ড গ্লাভসের বৃদ্ধাংগুলির অংশ বিশেষ পান। উক্ত বোতামটি নিহতের স্বামীর পরিহিত শার্টের বোতামের সাথে মিল ছিল না। বিভিন্ন কৌশলে তদন্তের একপর্যায়ে দেখা যায় হনুফা আক্তারের সহোদর ভাই মোহাম্মদ আলীর পরিহিত শার্টের একটি বোতাম ছেড়া এবং ঘটনাস্থলে প্রাপ্ত বোতামের সঙ্গে মোহাম্মদ আলীর পরিহিত শার্টের অন্যান্য বোতামের সাথে হুবহু মিল আছে। মোহাম্মদ আলীর শরীর পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় তার ডান কানের নিচে এবং নাকে হালকা নখের আচড় রয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আব্দুল্লাহিল কাফি আরও জানান, মোহাম্মদ আলীকে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তার বোন হনুফা আক্তারের হত্যার ঘটনায় সে নিজেই জড়িত মর্মে স্বীকার করে। এসময় আসামী জানায় যে, অনুমান ১২ বছর পূর্বে মোহাম্মদ আলী তার পিতা জীবিত থাকা অবস্থায় তার সমস্ত সম্পত্তি (অনুমান ২০ বিঘা) জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে রেজিস্ট্রি করে নেন। পরবর্তীতে তার পিতা কটু ফকির বিজ্ঞ আদালতে দেওয়ানী মামলা দায়ের করে উল্লেখিত জমি রায়ের মাধ্যমে ফেরত পান। অতঃপর কটু ফকির তার অনুমান ২০ বিঘা সম্পত্তি হনুফাকে ওসিয়ত দলিল করে দেন। এরপর হতে গ্রেপ্তার আসামী মোহাম্মদ আলী হনুফার অর্ধেক সম্পত্তি ফেরত দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে আসছে। এ বিষয়কে কেন্দ্র করে দীর্ঘ দিন ধরে ভাই বোনের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ ও বিরোধ চলে আসছিলো।
গ্রেপ্তার আসামী তার বোনের নিকট সম্পত্তি ফেরত না পেয়ে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১২ এপ্রিল রাত অনুমান ৭টার দিকে হনুফার স্বামী হারুন অর রশিদ তুষার তারাবির নামাজ পড়তে গেলে সেই সুযোগে আসামী মোহাম্মদ আলী তাকে তার ঘরে একা পেয়ে ধস্তাধস্তি করে খাটের উপর ফেলে ডান হাতে গ্লাভস পড়ে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার আসামীকে দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়েছে।