ঢাকার আশুলিয়ায় জুয়া খেলায় অতিষ্ট হয়ে গাড়িচালক আতিয়ার রহমানকে বিষ পান করিয়ে হত্যা করেছেন নিজ স্ত্রী। এ ঘটনায় অভিযুক্ত স্ত্রী দুলালী বেগম ও সহযোগিতার অভিযোগে তার ছেলে সজীব মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৪)। বৃহস্পতিবার (০৬ এপ্রিল) বিকেল ৩টার দিকে র্যাব-৪ নবীনগর ক্যাম্পে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান র্যাব-৪, সিপিসি-২ এর কোম্পানি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার রাকিব মাহামুদ খাঁন। এর আগে, গত ২২ মার্চ আশুলিয়ার জামগড়া রূপায়ন মাঠ এলাকা থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় গাড়িচালক আতিয়ার রহমানের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত আতিয়ার রহমান (৫১) রংপুরের গঙ্গাচড়া থানার উত্তর খলেয়ার হাজিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি পরিবারসহ আশুলিয়ার জামগড়া রূপায়ন মাঠ এলাকায় নিজ বাসায় থেকে প্রাইভেটকার চালাতেন।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- নিহত আতিয়ারের স্ত্রী মোছাম্মদ দুলালী বেগম (৪৫) এবং তার ছেলে মো. সজিব মিয়া (২৩)। বুধবার রাতে তাদের জামগড়ার বাড়ি থেকে মা ও ছেলেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব-৪, সিপিসি-২ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার রাকিব মাহামুদ খাঁন জানান, নিহতের ছেলে সজিব মিয়া গ্রেপ্তারের আগে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে আশুলিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনাটি র্যাব-৪ এর একটি গোয়েন্দা দল গাড়িচালক আতিয়ার রহমান হত্যার রহস্য উদঘাটন ও অপরাধীদেরকে আইনের আওতায় আনতে ছায়া তদন্ত শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-৪ এর একটি দল ৬ এপ্রিল দীর্ঘ গোয়েন্দা নজরদারী ও তথ্য প্রযুক্তির ভিত্তিতে আতিয়ার রহমান হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনপূর্বক হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত মূলহোতা আতিয়ারের স্ত্রী মোছাম্মদ দুলালী বেগম এবং তার ছেলে মো. সজিব মিয়াকে গ্রেপ্তার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জানান, দীর্ঘ ২৭ বছর আতিয়ার রহমানের সাথে পারিবারিকভাবে দুলালী বেগমের বিয়ে হয়। তাদের একটি ছেলে ও একটি মেয়ে রয়েছে। জীবিকার তাগিতে ১৬ বছর আগে ঢাকার আগুলিয়ায় এসে গাড়িচালক হিসেবে জীবিকা নির্বাহ শুরু করেন আতিয়ার এবং তার স্ত্রী একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। এছাড়া রূপায়ন মাঠ এলাকায় একটি বাড়ি নির্মাণ করেন। বিগত তিন-চার বছর ধরে ভিকটিম জুয়ার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন।
লেফটেন্যান্ট কমান্ডার রাকিব মাহামুদ খাঁন আরও জানান, জুয়ার প্রতি আসক্তি এবং স্থানীয় লোকজনের কাছে পাওনা টাকা পরিশোধের বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে স্ত্রীর সাথে পারিবারিক কলহ চলছিল। একপর্যায়ে ২১ মার্চ (২০২৩) রাতের খাবারের পর বাসা থেকে বের হয়ে জুয়া খেলে আবার টাকার জন্য বাসায় এসে তার স্ত্রী দুলালীকে চাপ সৃষ্টি করেন। তখন তার স্ত্রীর দুলালী টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে ঘরের দরজা বন্ধ করে তাকে মারধর করেন। একপর্যায়ে তার স্ত্রী দুলালী বেগম ক্ষিপ্ত হয়ে রাতে খাবারের সাথে ঘুমের ওষুধ খাওয়ান। পরে আতিয়ারকে ঘুমন্ত অবস্থায় স্ত্রী দুলালী তার হাত-পা রশি দিয়ে বেঁধে মুখে বিষ ঢেলে দেন ও গলায় চেপে ধরে শ্বাসরোধে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। এরপর স্ত্রী দুলালী বেগম তার অপর ঘর হতে ছেলে সজিব মিয়াকে ডেকে ঘটনাটি জানান। ছেলেকে ঘটনাটি কাউকে না জানানোর জন্য বলে এবং আতিয়ারের লাশটি ঘর থেকে বের করে রূপায়ন মাঠ এলাকায় ফেলে রাখেন।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান রাকিব মাহামুদ খাঁন।