ঢাকা , রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘সব সমস্যার সমাধানের’ আশ্বাসে টাকা আত্মসাত, ভন্ড তান্ত্রিকসহ গ্রেপ্তার ২

ঢাকার সাভারে সব সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দিয়ে এক ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় ৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে ভন্ড তান্ত্রিক গুরু মাসহ দুই নারী প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। মঙ্গলবার (০৪ এপ্রিল) দুপুরে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানান ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিপ্লব। এর আগে, সোমবার (০৩ এপ্রিল) রাতে সাভার মডেল থানাধীন অমরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ভন্ড তান্ত্রিক আসমানী বেগম ওরফে শীতা রানী (৭০) ঢাকা জেলার সাভার মডেল থানাধীন পোড়াবাড়ি ছোট অমরপুর বেদে পল্লী এলাকার মৃত আব্দুস ছামাদের মেয়ে। তার স্বামীর নাম মো. তোরাব আলী। অপরজন তার সহযোগী ও একই এলাকার তোরাব আলীর মেয়ে শিউলি বেগম (৪০)। তার স্বামীর নাম মৃত কাত্তর মিয়া।
ডিবি পুলিশ জানায়, গত বছরের ১০ অক্টোবর রাজধানীর মহাখালী বাজার মোড়ে ওয়ালে একটি বিজ্ঞাপন দেখতে পায় ভুক্তভোগী প্রভাত চন্দ্র বিশ্বাস। যেখানে লেখা ছিলো “এখানে সকল সমস্যার সমাধান করা হয়” নিচে একটি নাম্বার দেয়া ছিলো। ভুক্তভোগী উক্ত নাম্বারে ফোন দিয়ে তার সকল সমস্যা বললে ফোনের অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি তাকে আশ্বস্ত করে যে উক্ত ব্যক্তি একজন তান্ত্রিক, তিনি সাভারের অমরপুরে থাকে এবং তিনি বহুদিন যাবত এমন সমস্যার সমাধান করে এসেছেন। কিন্তু উক্ত সমস্যা সমাধান করতে হলে তাকে (প্রভাত) টাকা খরচ করতে হবে। ভুক্তভোগী উক্ত তান্ত্রিককে অন্ধবিশ্বাস করে বিভিন্ন তারিখে সর্বমোট ৩ লাখ ৯৭ হাজার ২৫০ টাকা প্রদান করে। কিন্তু দীর্ঘকাল অতিবাহিত হলেও উক্ত তান্ত্রিক ভুক্তভোগীর কোন সমস্যা সমাধান না করে উল্টো তাকে হুমকি ধামকি প্রদান করে এবং মহিষ কেনার কথা বলে আরও ৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা দাবি করে। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী প্রভাত চন্দ্র বিশ্বাস এই প্রতারনার বিষয়টি বুঝতে পেরে সাভার মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-২৭, ধারা-৪২০/৪০৬।
ডিবি পুলিশ আরও জানায়, প্রথমে মামলাটি থানা পুলিশ তদন্ত করে। পরবর্তীতে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান মামলাটির তদন্তভার ডিবি উত্তর ঢাকাকে প্রদান করলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) মোবাশ্শিরা হাবিব খানের সরাসরি তত্ত্বাবধানে অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিপ্লবের নেতৃত্বে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. আনোয়ার হোসেনসহ একটি চৌকষ টিম সাভারের অমরপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ভন্ড তান্ত্রিক গুরু মা আসমানী বেগম ওরফে শীতা রানী ও তার সহযোগী শিউলি বেগমকে গ্রেপ্তার করে।
মামলা তদন্ত করতে গিয়ে জানা যায়, ভন্ড তান্ত্রিক গুরু মা আসমানী বেগম ওরফে শীতা রানী তার সহযোগীদের নিয়ে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র গড়ে তুলেছিল। তারা দীর্ঘদিন যাবত তান্ত্রিক গুরু মা সেজে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানসহ লটারি, গুপ্তধন, জটিল রোগ থেকে মুক্তি, পাওনা টাকা আদায়, দাম্পত্য কলহ, ভালোবাসার মানুষকে বশে আনাসহ সকল সমস্যার সমাধান করতে পারে মর্মে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন তৈরি করে তা প্রচার করে এবং সাধারণ মানুষকে প্রলোভন ও মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে কৌশলে টাকা আত্মসাৎ করে আসছিলো।
এ ব্যাপারে ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিপ্লব বলেন, গ্রেপ্তার দুই আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে তারা মামলার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে। তাদের বিজ্ঞ আদালতে প্রেরন করা হয়েছে এবং উক্ত ঘটনায় আরো কারা জড়িত আছে সে বিষয়ে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
ট্যাগস

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

‘সব সমস্যার সমাধানের’ আশ্বাসে টাকা আত্মসাত, ভন্ড তান্ত্রিকসহ গ্রেপ্তার ২

আপডেট সময় ০৭:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ এপ্রিল ২০২৩
ঢাকার সাভারে সব সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দিয়ে এক ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় ৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে ভন্ড তান্ত্রিক গুরু মাসহ দুই নারী প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। মঙ্গলবার (০৪ এপ্রিল) দুপুরে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানান ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিপ্লব। এর আগে, সোমবার (০৩ এপ্রিল) রাতে সাভার মডেল থানাধীন অমরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ভন্ড তান্ত্রিক আসমানী বেগম ওরফে শীতা রানী (৭০) ঢাকা জেলার সাভার মডেল থানাধীন পোড়াবাড়ি ছোট অমরপুর বেদে পল্লী এলাকার মৃত আব্দুস ছামাদের মেয়ে। তার স্বামীর নাম মো. তোরাব আলী। অপরজন তার সহযোগী ও একই এলাকার তোরাব আলীর মেয়ে শিউলি বেগম (৪০)। তার স্বামীর নাম মৃত কাত্তর মিয়া।
ডিবি পুলিশ জানায়, গত বছরের ১০ অক্টোবর রাজধানীর মহাখালী বাজার মোড়ে ওয়ালে একটি বিজ্ঞাপন দেখতে পায় ভুক্তভোগী প্রভাত চন্দ্র বিশ্বাস। যেখানে লেখা ছিলো “এখানে সকল সমস্যার সমাধান করা হয়” নিচে একটি নাম্বার দেয়া ছিলো। ভুক্তভোগী উক্ত নাম্বারে ফোন দিয়ে তার সকল সমস্যা বললে ফোনের অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি তাকে আশ্বস্ত করে যে উক্ত ব্যক্তি একজন তান্ত্রিক, তিনি সাভারের অমরপুরে থাকে এবং তিনি বহুদিন যাবত এমন সমস্যার সমাধান করে এসেছেন। কিন্তু উক্ত সমস্যা সমাধান করতে হলে তাকে (প্রভাত) টাকা খরচ করতে হবে। ভুক্তভোগী উক্ত তান্ত্রিককে অন্ধবিশ্বাস করে বিভিন্ন তারিখে সর্বমোট ৩ লাখ ৯৭ হাজার ২৫০ টাকা প্রদান করে। কিন্তু দীর্ঘকাল অতিবাহিত হলেও উক্ত তান্ত্রিক ভুক্তভোগীর কোন সমস্যা সমাধান না করে উল্টো তাকে হুমকি ধামকি প্রদান করে এবং মহিষ কেনার কথা বলে আরও ৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা দাবি করে। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী প্রভাত চন্দ্র বিশ্বাস এই প্রতারনার বিষয়টি বুঝতে পেরে সাভার মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-২৭, ধারা-৪২০/৪০৬।
ডিবি পুলিশ আরও জানায়, প্রথমে মামলাটি থানা পুলিশ তদন্ত করে। পরবর্তীতে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান মামলাটির তদন্তভার ডিবি উত্তর ঢাকাকে প্রদান করলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) মোবাশ্শিরা হাবিব খানের সরাসরি তত্ত্বাবধানে অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিপ্লবের নেতৃত্বে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. আনোয়ার হোসেনসহ একটি চৌকষ টিম সাভারের অমরপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ভন্ড তান্ত্রিক গুরু মা আসমানী বেগম ওরফে শীতা রানী ও তার সহযোগী শিউলি বেগমকে গ্রেপ্তার করে।
মামলা তদন্ত করতে গিয়ে জানা যায়, ভন্ড তান্ত্রিক গুরু মা আসমানী বেগম ওরফে শীতা রানী তার সহযোগীদের নিয়ে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র গড়ে তুলেছিল। তারা দীর্ঘদিন যাবত তান্ত্রিক গুরু মা সেজে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানসহ লটারি, গুপ্তধন, জটিল রোগ থেকে মুক্তি, পাওনা টাকা আদায়, দাম্পত্য কলহ, ভালোবাসার মানুষকে বশে আনাসহ সকল সমস্যার সমাধান করতে পারে মর্মে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন তৈরি করে তা প্রচার করে এবং সাধারণ মানুষকে প্রলোভন ও মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে কৌশলে টাকা আত্মসাৎ করে আসছিলো।
এ ব্যাপারে ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিপ্লব বলেন, গ্রেপ্তার দুই আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে তারা মামলার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে। তাদের বিজ্ঞ আদালতে প্রেরন করা হয়েছে এবং উক্ত ঘটনায় আরো কারা জড়িত আছে সে বিষয়ে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।