ঢাকা , রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জাবির কলেজছাত্রের অপহরণের ১০ দিন পর বস্তাবন্দী মরদেহ উদ্ধার, আটক ৩

জাবির কলেজছাত্রের অপহরণের ১০ দিন পর বস্তাবন্দী মরদেহ উদ্ধার, আটক ৩

ঢাকার আশুলিয়ায় অপহরণের ১০ দিন পর ফারাবি আহমেদ হৃদয় (২২) নামে এক কলেজছাত্রের হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৪)। এ ঘটনায় জড়িত নিহতের তিন বন্ধুকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
জাবির কলেজছাত্রের অপহরণের ১০ দিন পর বস্তাবন্দী মরদেহ উদ্ধার, আটক ৩
বৃহস্পতিবার (১৮ মে) আশুলিয়ার মোজার মিল এলাকার শিববাড়ি ইস্টার্ন হাউজিং জলাশয় থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। অপহরণের পর ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চেয়ে না পেয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় হৃদয়কে। পরে জলাশয়ে মরদেহ ফেলে দেয়া হয়। পানিতে মরদেহ যেন ভেসে না ওঠে, সে জন্য বস্তার সঙ্গে ইট বেঁধে দিয়েছিল হত্যাকারীরা।

জাবির কলেজছাত্রের অপহরণের ১০ দিন পর  বস্তাবন্দী মরদেহ উদ্ধার, আটক ৩

নিহত ফারাবি আহমেদ হৃদয় আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার ফজলুল হক মিয়ার ছেলে। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল এন্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। গত ৮ মে জামগড়ার বাসা থেকে বের হওয়ার পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। পরে গত ১১ মে আশুলিয়া থানায় একটি নিখোঁজের ডায়েরি করেন নিহতের পরিবার।

আটককৃতরা হলেন- মানিকগঞ্জ সদর থানার পশ্চিম দাসপাড়া গ্রামের বাবুল হোসেনের ছেলে ময়েজ হোসেন পরান (২২) ও বগুড়ার সোনাতলা থানার মহেশপাড়া গ্রামের মো. তাহেলুল ইসলামের ছেলে সুমন মিয়া বাপ্পী (২৫) ও আকাশ। পরান আশুলিয়ার জামগড়ায় শফিকের বাড়িতে ভাড়া থেকে স্থানীয় ফার্নিচারের দোকানে কাজ করতেন।

বুধবার রাত ১০টার দিকে আশুলিয়ার জামগড়া থেকে তাকে আটক করে পুলিশ। সুমন আশুলিয়ার শ্রীপুরে দারোগ আলীর বাড়িতে ভাড়া থেকে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। তাকে বৃহস্পতিবার সকালে টাঙ্গাইলের সখীপুর এলাকা থেকে আটক করে র‌্যাব-৪।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর মিরপুর থেকে আকাশকে আটক করা হয়। তিনি পেশায় পোশাক শ্রমিক। তবে তার বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি। ঘটনায় জড়িতরা নিহত হৃদয়ের বন্ধু ছিলেন বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

র‌্যাব-৪ জানায়, গত ৮ মে সকাল ১০টার দিকে পরাণ বন্ধু ফারাবী আহমেদ হৃদয়কে তার ভাড়া বাসায় ডেকে নিয়ে যায়। পরে জিম্মি করে পরিবারের কাছে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। সেদিন দুপুরে তাকে হত্যা করে মরদেহ প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে রাখেন। বিকেল ৪টার দিকে শ্রীপুরের একটি পুকুরে বস্তাবন্দি মরদেহ ফেলে দেন। দুই দিন পর আসামিরা আবার ওই পুকুরে মরদেহ ভেসে উঠেছে কিনা দেখতে যান। তারা মরদেহ ভেসে উঠা দেখতে পেয়ে আবার ওপরে তুলে ৮/১০টি ইট বস্তার ভেতরে ভরে পুকুরে ডুবিয়ে দেন।

র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিইও) লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোহাম্মদ আব্দুর রহমান বলেন, আসামিরা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল ছিল। পক্ষান্তরে ভিকটিমের পরিবার সম্পদশালী ছিল। তারা ভিকটিমের ধনসম্পদ দেখে লোভে পড়ে যান এবং পরিকল্পনা করেন যে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করবেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৮ মে বিকেলে আসামিরা হৃদয়কে আড্ডা দেওয়ার কথা বলে সুকৌশলে আকাশের বাসায় নিয়ে যায়। পরবর্তীতে তারা হৃদয়কে রশি দিয়ে বেঁধে ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকে তার বাবার মোবাইলে ফোন করে মুক্তিপণ বাবদ ৫০ লাখ টাকা দাবি করে। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে আসামিরা হৃদয়কে গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে এবং পরবর্তীতে তার মুখে বালিশচাপা দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। তারপর বিকেল ৪টার দিকে হৃদয়ের মরদেহ বস্তাবন্দি করে সুকৌশলে ঘটনাস্থল থেকে রিকশাযোগে মোজারমিল এলাকায় একটি পরিত্যক্ত ডোবায় ফেলে দেয়। পরে আসামিরা আত্মগোপনের উদ্দেশে এলাকা ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যায়।

র‌্যাব কর্মকর্তা আরও বলেন, এখান থেকে শিক্ষা নিতে হবে। বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমাদের আরও সতর্ক হতে হবে।

এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল হাসান বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। এ ব্যাপারে নিহতের পরিবার হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

গ্রিন টিভি বাংলা

গ্রিন টিভি বাংলার একটি সম্পূর্ন অনলাইন ফেজবুক,ইউটিউব, নিউজপোর্টাল ভিক্তিক টিভি চ্যানেল । যে কোন বিষয় মতামত দিয়ে আমাদেকে সহযোগিতা করুন এবং নিউজ পড়ুন বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের সাথে থাকুন

জাবির কলেজছাত্রের অপহরণের ১০ দিন পর বস্তাবন্দী মরদেহ উদ্ধার, আটক ৩

আপডেট সময় ০৭:০৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ মে ২০২৩

ঢাকার আশুলিয়ায় অপহরণের ১০ দিন পর ফারাবি আহমেদ হৃদয় (২২) নামে এক কলেজছাত্রের হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৪)। এ ঘটনায় জড়িত নিহতের তিন বন্ধুকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
জাবির কলেজছাত্রের অপহরণের ১০ দিন পর বস্তাবন্দী মরদেহ উদ্ধার, আটক ৩
বৃহস্পতিবার (১৮ মে) আশুলিয়ার মোজার মিল এলাকার শিববাড়ি ইস্টার্ন হাউজিং জলাশয় থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। অপহরণের পর ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চেয়ে না পেয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় হৃদয়কে। পরে জলাশয়ে মরদেহ ফেলে দেয়া হয়। পানিতে মরদেহ যেন ভেসে না ওঠে, সে জন্য বস্তার সঙ্গে ইট বেঁধে দিয়েছিল হত্যাকারীরা।

জাবির কলেজছাত্রের অপহরণের ১০ দিন পর  বস্তাবন্দী মরদেহ উদ্ধার, আটক ৩

নিহত ফারাবি আহমেদ হৃদয় আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার ফজলুল হক মিয়ার ছেলে। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল এন্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। গত ৮ মে জামগড়ার বাসা থেকে বের হওয়ার পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। পরে গত ১১ মে আশুলিয়া থানায় একটি নিখোঁজের ডায়েরি করেন নিহতের পরিবার।

আটককৃতরা হলেন- মানিকগঞ্জ সদর থানার পশ্চিম দাসপাড়া গ্রামের বাবুল হোসেনের ছেলে ময়েজ হোসেন পরান (২২) ও বগুড়ার সোনাতলা থানার মহেশপাড়া গ্রামের মো. তাহেলুল ইসলামের ছেলে সুমন মিয়া বাপ্পী (২৫) ও আকাশ। পরান আশুলিয়ার জামগড়ায় শফিকের বাড়িতে ভাড়া থেকে স্থানীয় ফার্নিচারের দোকানে কাজ করতেন।

বুধবার রাত ১০টার দিকে আশুলিয়ার জামগড়া থেকে তাকে আটক করে পুলিশ। সুমন আশুলিয়ার শ্রীপুরে দারোগ আলীর বাড়িতে ভাড়া থেকে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। তাকে বৃহস্পতিবার সকালে টাঙ্গাইলের সখীপুর এলাকা থেকে আটক করে র‌্যাব-৪।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর মিরপুর থেকে আকাশকে আটক করা হয়। তিনি পেশায় পোশাক শ্রমিক। তবে তার বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি। ঘটনায় জড়িতরা নিহত হৃদয়ের বন্ধু ছিলেন বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

র‌্যাব-৪ জানায়, গত ৮ মে সকাল ১০টার দিকে পরাণ বন্ধু ফারাবী আহমেদ হৃদয়কে তার ভাড়া বাসায় ডেকে নিয়ে যায়। পরে জিম্মি করে পরিবারের কাছে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। সেদিন দুপুরে তাকে হত্যা করে মরদেহ প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে রাখেন। বিকেল ৪টার দিকে শ্রীপুরের একটি পুকুরে বস্তাবন্দি মরদেহ ফেলে দেন। দুই দিন পর আসামিরা আবার ওই পুকুরে মরদেহ ভেসে উঠেছে কিনা দেখতে যান। তারা মরদেহ ভেসে উঠা দেখতে পেয়ে আবার ওপরে তুলে ৮/১০টি ইট বস্তার ভেতরে ভরে পুকুরে ডুবিয়ে দেন।

র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিইও) লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোহাম্মদ আব্দুর রহমান বলেন, আসামিরা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল ছিল। পক্ষান্তরে ভিকটিমের পরিবার সম্পদশালী ছিল। তারা ভিকটিমের ধনসম্পদ দেখে লোভে পড়ে যান এবং পরিকল্পনা করেন যে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করবেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৮ মে বিকেলে আসামিরা হৃদয়কে আড্ডা দেওয়ার কথা বলে সুকৌশলে আকাশের বাসায় নিয়ে যায়। পরবর্তীতে তারা হৃদয়কে রশি দিয়ে বেঁধে ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকে তার বাবার মোবাইলে ফোন করে মুক্তিপণ বাবদ ৫০ লাখ টাকা দাবি করে। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে আসামিরা হৃদয়কে গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে এবং পরবর্তীতে তার মুখে বালিশচাপা দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। তারপর বিকেল ৪টার দিকে হৃদয়ের মরদেহ বস্তাবন্দি করে সুকৌশলে ঘটনাস্থল থেকে রিকশাযোগে মোজারমিল এলাকায় একটি পরিত্যক্ত ডোবায় ফেলে দেয়। পরে আসামিরা আত্মগোপনের উদ্দেশে এলাকা ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যায়।

র‌্যাব কর্মকর্তা আরও বলেন, এখান থেকে শিক্ষা নিতে হবে। বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমাদের আরও সতর্ক হতে হবে।

এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল হাসান বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। এ ব্যাপারে নিহতের পরিবার হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।