ঢাকা , শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিদেশে চিকিৎসা নিতে রাজি ছিলেননা ডা. জাফরুল্লাহ

গরিবের ডাঃ হিবেবে সু-পরিচিত ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী মিশে যেতেন সহজে। আর সে কারণে তিনি বুঝতে পারতেন গরীবের দুঃখ-কষ্ট। আর সেই গরীব মানুষের মতই জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন।

জানা যায়, লন্ডনে থাকার সময় তিনি দেখেছেন সেখানকার মানুষের চাল-চলন। প্রভাবশালী আর অভিজাত পরিবারে জন্ম হলেও খুব সাধারণ জীবন-যাপন করতেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এই বীর মুক্তিযোদ্ধা এক্কেবারে অতি সাধারণ জীবন-যাপন করতেন। প্রায় দেখা যেত তাকে বড় বড় অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে দাওয়াত করা হতো। তিনি সেখানে উপস্থিত হতেন সদামাট পোশাক পরে। অনুষ্ঠানের অন্য অতিথিরা যখন আভিজাত্যের বড়াই করতে তিনি তখন নীরবে ভাবতেন গবীর মানুষের কথা। আর সে কারণে হয়তো তাকে কখনো অহংকারি হতে দেখা যায়নি।

এমননি এক অনুষ্ঠানে স্রোতাদের প্রশ্বের জবাবে জানান, ৩০ বছর এক শার্ট পরে কাটিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করেছেন ভাঙা একটি গাড়ি। তার প্রতিষ্ঠানের যারা কাজ করেন তারাও তার থেকে দামি গাড়ি চড়েন। তিনি সেই প্রতিষ্ঠানের দামি গাড়িতে কখনো উঠেননি। বার বার নষ্ট হওয়ার পরও নিজের ভাঙা গাড়ীই ছিলো সম্ভব।

ঢাকায় কোনো বাড়ী কিংবা জমি নেই তার। নিজের মুখে জানালেন থাকে তিনি বউয়ের বাড়ীতে।

সাদা ও হালকা বেগুনি চেকের একটি মাত্র শার্টে থাকে গেছে দিনে পর দিন। এছাড়াও ধুসর রংয়ের শার্ট পছন্ন জাফরুল্লাহ চৌধুরীর। আর পরেন থাকত শাদা প্যান্ট। অনেকসময় তার পরনের প্যান্টে তালি দেখা গেছে।

সম্প্রতি এক আলাপচারিতায় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী জানান, দেশের মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না। তারা কষ্টে থাকেন দেখে তিনিও সাধারণ বেশভূষায় চলতে পছন্দ করেন।

তিনি আরও বলেন, লন্ডনে থাকা অবস্থায় সেখানকার রাজ পরিবারের প্রিন্স চার্লস যে টেইলারে স্যুট সেলাই করতেন, তার স্যুটও সেখানকার দর্জি সেলাই করে দিতেন। এসে তার জামার মাপ নিয়ে যেতেন।

বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধকালীন ও পরবর্তী পরিস্থিতি তুলে ধরে জাফরুল্লাহ চৌধুরী তার শার্ট ও প্যান্ট পরা, জীবনাচরণের ব্যাখ্যা দেন। তিনি বিভিন্ন ঘটনাও উল্লেখ করেন বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে যা ছাপা হয়।

তিনি নিজের অনেক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার প্রতিষ্ঠানের দামি গাড়ির অভাব ছিল না। তারপরেও তিনি একটি ভাঙা পুরনো মডেলের গাড়িতেই চলাফেরা করতেন সব সময়।

জানা যায়, বহু বছর ধরে কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন ৮২ বছর বয়সী ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। কয়েক দিন আগে তার বার্ধক্যজনিত জটিলতাগুলো খারাপের দিকে যায়। এ অবস্থায় তাকে গত বুধবার গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রাজধানীর ধানমণ্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নিজের তৈরি হাসপাতালে থেকেই বিদায় নিলেন তিনি। তাকে বলা হয়েছে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে তিনি রাজি হয়নি।

 

ট্যাগস

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

গ্রিন টিভি বাংলা

গ্রিন টিভি বাংলার একটি সম্পূর্ন অনলাইন ফেজবুক,ইউটিউব, নিউজপোর্টাল ভিক্তিক টিভি চ্যানেল । যে কোন বিষয় মতামত দিয়ে আমাদেকে সহযোগিতা করুন এবং নিউজ পড়ুন বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের সাথে থাকুন

বিদেশে চিকিৎসা নিতে রাজি ছিলেননা ডা. জাফরুল্লাহ

আপডেট সময় ০৮:১৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল ২০২৩

গরিবের ডাঃ হিবেবে সু-পরিচিত ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী মিশে যেতেন সহজে। আর সে কারণে তিনি বুঝতে পারতেন গরীবের দুঃখ-কষ্ট। আর সেই গরীব মানুষের মতই জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন।

জানা যায়, লন্ডনে থাকার সময় তিনি দেখেছেন সেখানকার মানুষের চাল-চলন। প্রভাবশালী আর অভিজাত পরিবারে জন্ম হলেও খুব সাধারণ জীবন-যাপন করতেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এই বীর মুক্তিযোদ্ধা এক্কেবারে অতি সাধারণ জীবন-যাপন করতেন। প্রায় দেখা যেত তাকে বড় বড় অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে দাওয়াত করা হতো। তিনি সেখানে উপস্থিত হতেন সদামাট পোশাক পরে। অনুষ্ঠানের অন্য অতিথিরা যখন আভিজাত্যের বড়াই করতে তিনি তখন নীরবে ভাবতেন গবীর মানুষের কথা। আর সে কারণে হয়তো তাকে কখনো অহংকারি হতে দেখা যায়নি।

এমননি এক অনুষ্ঠানে স্রোতাদের প্রশ্বের জবাবে জানান, ৩০ বছর এক শার্ট পরে কাটিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করেছেন ভাঙা একটি গাড়ি। তার প্রতিষ্ঠানের যারা কাজ করেন তারাও তার থেকে দামি গাড়ি চড়েন। তিনি সেই প্রতিষ্ঠানের দামি গাড়িতে কখনো উঠেননি। বার বার নষ্ট হওয়ার পরও নিজের ভাঙা গাড়ীই ছিলো সম্ভব।

ঢাকায় কোনো বাড়ী কিংবা জমি নেই তার। নিজের মুখে জানালেন থাকে তিনি বউয়ের বাড়ীতে।

সাদা ও হালকা বেগুনি চেকের একটি মাত্র শার্টে থাকে গেছে দিনে পর দিন। এছাড়াও ধুসর রংয়ের শার্ট পছন্ন জাফরুল্লাহ চৌধুরীর। আর পরেন থাকত শাদা প্যান্ট। অনেকসময় তার পরনের প্যান্টে তালি দেখা গেছে।

সম্প্রতি এক আলাপচারিতায় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী জানান, দেশের মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না। তারা কষ্টে থাকেন দেখে তিনিও সাধারণ বেশভূষায় চলতে পছন্দ করেন।

তিনি আরও বলেন, লন্ডনে থাকা অবস্থায় সেখানকার রাজ পরিবারের প্রিন্স চার্লস যে টেইলারে স্যুট সেলাই করতেন, তার স্যুটও সেখানকার দর্জি সেলাই করে দিতেন। এসে তার জামার মাপ নিয়ে যেতেন।

বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধকালীন ও পরবর্তী পরিস্থিতি তুলে ধরে জাফরুল্লাহ চৌধুরী তার শার্ট ও প্যান্ট পরা, জীবনাচরণের ব্যাখ্যা দেন। তিনি বিভিন্ন ঘটনাও উল্লেখ করেন বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে যা ছাপা হয়।

তিনি নিজের অনেক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার প্রতিষ্ঠানের দামি গাড়ির অভাব ছিল না। তারপরেও তিনি একটি ভাঙা পুরনো মডেলের গাড়িতেই চলাফেরা করতেন সব সময়।

জানা যায়, বহু বছর ধরে কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন ৮২ বছর বয়সী ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। কয়েক দিন আগে তার বার্ধক্যজনিত জটিলতাগুলো খারাপের দিকে যায়। এ অবস্থায় তাকে গত বুধবার গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রাজধানীর ধানমণ্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নিজের তৈরি হাসপাতালে থেকেই বিদায় নিলেন তিনি। তাকে বলা হয়েছে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে তিনি রাজি হয়নি।