গতকাল ছিল ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব (এমবিই) সমাজ সচেতন এবং বন্ধু বৎসল ফয়েজ উদ্দিন সাহেবের বাসায় ইফতারের দাওয়াত। অধিকাংশই স্থানীয় হলেও আমাকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার ড্রাইভ করে তাঁর এই ইফতার মাহফিলে শরিক হতে হলো। উপস্থিত ১২ জন ডাক্তারই নিজ নিজ অবস্থানে উজ্জ্বল। অনুষ্ঠানে ডাক্তার ছাড়াও অন্য পেশার প্রতিষ্ঠিত লোকজন উপস্থিত ছিলেন। শুধু ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকেই উপস্থিত ছিলাম আমরা তিনজন।
যারা ওখানে উপস্থিত ছিলেন তাদের মাসিক বা বার্ষিক আয় কত? বার্ষিক আয় গড়ে (প্রাইভেট প্র্যাকটিস ছাড়া) প্রায় দু’ কোটি টাকা হয় এমন লোকজনের সংখ্যাই ছিল বেশি। আর ফয়েজ ভাইয়ের যে বাসা তার মূল্য তো বাংলাদেশি টাকায় প্রায় সাত কোটি টাকা হবে।
আতিথেয়তা ছিল দেখার মত। বাংলাদেশে সাধারণ মানুষ যেসব আইটেম দিয়ে ইফতার করে ঠিক সে আইটেমগুলোই ছিল। ইফতার সামগ্রীর মধ্যে জিলাপিও ছিল। তবে সে জিলাপি সোনায় মোড়ানো ছিল না। ইচ্ছে করলেও ফয়েজ ভাইয়ের পক্ষে সোনার জিলাপি দেওয়া সম্ভব ছিল না।
কারণ এই জিলাপি ইংল্যান্ডে তৈরি হয় না।
তবে সোনায় মোড়ানো জিলাপি বাংলাদেশে তৈরি হয়। রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল বিশ হাজার টাকা কেজি দরে এই বিশেষ জিলাপি বিক্রি শুরু করলে ক্রেতাদের তীব্র চাহিদার কারণে তরল সোনা না থাকায় এ বিশেষ জিলাপি বিক্রি সোমবার বন্ধ করতে হোটেল কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়।
আচ্ছা তরল সোনা খেলে কী হয়? পরিপাকতন্ত্রে কি বিশেষ কোন অনুভুতি আসে?যারা এই বিশেষ সোনা জিলাপি ভক্ষণ করেছেন তারা কী আমাদের একটু বলবেন? যদি বলেন তাহলে সামনের বার ফয়েজ উদ্দিন এমবিই’র বাসায় ইফতারের দাওয়াত নেওয়ার আগে সোনা জিলাপি রাখার আবদার জানাবো। সমাজের এতো ধনী ও প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের ইজ্জতের দিকে খেয়াল রেখে উনার উচিৎ হবে প্লেটে সোনা জিলাপি রাখা। আর উনি যদি বলেন যে, সোনা জিলাপি কেনার সামর্থ্য নেই তাহলে বুঝতে হবে বাংলাদেশে শুধু রাজধানীতেই বার্ষিক ২ কোটি টাকা আয়ের লোক সংখ্যা হাজার হাজার। আসলে ইংল্যান্ডের লোকজনই মিসকিন।সব রাজা বাদশাহরা থাকেন বাংলাদেশে।
বাংলাদেশের মানুষের রুচির দুর্ভিক্ষ চলছে। নিরেট একটি ইসলামী ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে (ইফতার মাহফিল) হাসি-তামাশার বস্তু বানানোর জন্য একদল লোক উঠে পড়ে লেগেছে। আল্লাহ খোদায় বিশ্বাস নেই, প্রকাশ্য নাস্তিক এমন লোকজনও দেখছি ইফতার বানাচ্ছে, ফেসবুকে লাইভ দিচ্ছে, সংবাদ মাধ্যমে ছবি এবং খবর পাঠাচ্ছেন। ব্যক্তিগত জীবনে ইসলাম চর্চার উদাহরণ নেই, কিন্তু ইফতার নিয়ে উৎসাহের শেষ নেই। কেন? বাংলাদেশের ধর্ম প্রিয় মানুষকে একটু শান্তভাবে রমজানটা পার করতে দিলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যাবে? ইসলামের মৌলিক বিধান নিয়ে হাসি তামাশা করা বন্ধ করুন।
ভালো কথা, বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোন দেশে সোনা জিলাপি তৈরি এবং বিক্রি হলে আপনারা আমাকে দয়া করে জানাবেন। পরবর্তী ইফতার মাহফিলের জন্য সোনা জিলাপির কথা ফয়েজ ভাইকে অগ্রিম বলে রাখতে হবে।