ঢাকা , বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo ধামরাইয়ে নিরাপদ সড়ক চাই শাখার কমিটি গঠন শপথ গ্রহণ আলোচনা সভা Logo খাগড়াছড়িতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে রাসেল নামে ফায়ার সার্ভিস কর্মী নিহত Logo ধামরাই উপজেলার সানোড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মোঃ মিজানুর রহমান সকলের কাছে দোয়া ও সমর্থন প্রত্যাশী। Logo এমপি বেনজীর আহমদ এর পক্ষ থেকে পবিত্র ঈদ-উল ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন আহাম্মদ আলী Logo ধামরাই বাসিকে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়েছে মোঃ রফিকুল ইসলাম (নপু) Logo রাজধানীতে ৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৩৭ লাখ টাকা জরিমানা Logo জুনের মধ্যে ১০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন হবে : প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী Logo ট্যানারী শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা করার দাবি Logo সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে Logo ঈদের ছুটির আগে সব সেক্টরের শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেয়ার সিদ্ধান্ত

হাত-পা বেঁধে হাসেম কে অমানুষিক নির্যাতন নেপথ্যে যারা

 

মোঃ ফারুক হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
ঢাকার ধামরাইয়ে একটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও প্যানেল চেয়ারম্যান, চেয়ারম্যানের দুই ছেলে জোর পূর্বক রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে চেয়ারম্যানের বাড়ির ভিতর গেট আটকে দিয়ে মারধর করার ঘটনা ঘটেছে। ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে ভুক্তভোগী হাসেমকে পরিবারের লোকজন উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করেন। মারধরের ঘটনায় ভুক্তভোগী হাসেম এখন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।

এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে উপজেলার কুল্লা ইউনিয়নের খাতরা গ্রামে চেয়ারম্যান লুৎফর রহমানের বাড়িতে।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী হাসেমের সাথে চেয়ারম্যান লুৎফর রহমানের জমি নিয়ে দির্ঘদিনের শত্রুতা চলছে। হাসেম নতুন বাড়ি করতে গেলে চেয়ারম্যান ও তার লোকজন জোর পূর্বক বাড়ি তৈরির কাজ বন্ধ করে দেন। তাকে বাড়ি ছেড়ে দিতে বলে চেয়ারম্যান। সেখানে নিজের বাবার নামে মার্কেট তৈরি করবে বলে জানান তিনি। হাসেম অসহায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলে হাসেম ও তার পরিবারকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আসছে। এলাকায় একটি ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করছে চেয়ারম্যান। নিজের রয়েছে একটি নিজস্ব বাহিনী।

জমি সংক্রান্ত পূর্ব শত্রুতার জেরে গত মঙ্গলবার ৫ মার্চ রাত ১০ টার দিকে বাড়ি ফেরার পথে হাসেমকে জোরপূর্বক রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে যায় চেয়ারম্যান লুৎফর রহমানের দুই ছেলে রিপন ও মুমিন, প্যানেল চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন, স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হক, জাহিদ ও খাতরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শামীম। হাসেমকে চেয়ারম্যানের বাড়িতে নিয়ে হাত পা মুখ বেধে তার উপর অমানুষিক নির্যাতন চালাতে থাকে চেয়ারম্যানের দুই ছেলে রিপন ও মুমিন, প্যানেল চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন সহ দলের সবাই। জোরপূর্বক তার বাড়ি ছেড়ে দিতে বলে। সেখানে চেয়ারম্যানের বাবার নামে মার্কেট করবে। দেশীয় অস্ত্র দিয়ে পিটিয়ে হাসেমের বাম পা ও বাম হাত ভেঙে গুড়ো করে দেয়। এছাড়াও তার কোমড়, মুখ, ডান পা পিটিয়ে ক্ষত বিক্ষত করে। শরীরের পিছনে পিটিয়ে চামড়া ছিড়ে যায় বলে জানান ভুক্তভোগী হাসেমের স্ত্রী। ৯৯৯ এ ফোন দিলে ঘটনাস্থলে পুলিশ যায়। আশ্চার্জের বিষয় পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লুৎফর চেয়ারম্যানের পক্ষ অবলম্বন করে বলে জানান ভুক্তভোগীর পরিবার। পুলিশের সামনেই হাসেমকে মারতে থাকে চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান, প্যানেল চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন,চেয়ারম্যানের ছেলে রিপন ও মুমিন এবং স্কুল শিক্ষক শামীম। ঘটনাস্থলে ভুক্তভোগী হাসেমের স্ত্রী ও ভাইয়েরা গেলে তাদেরও মারধর করে চেয়ারম্যান বাহিনী। পুলিশের সামনে জোরপূর্বক সাদা কাগজে স্বাক্ষর করায় চেয়ারম্যানের লোকজন। কিন্তু ভুক্তভোগী হাসেমের ভাই জাহের আলী বলেন, আমার ভাই তো মরে গেছে আমি স্বাক্ষর দিবো না বললে তাকেও মারদর করে চেয়ারম্যান। পুলিশ কিছুই না বলে চেয়ারম্যানের পক্ষ অবলম্বন করেন।
ভুক্তভোগী হাসেম উপজেলার কুল্লা ইউনিয়নের খাতরা এলাকার মৃত গোলাম আলীর ছেলে।

চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান ও প্যানেল চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিনের রয়েছে একটি নিজস্ব বাহিনী। লুৎফর রহমান চেয়ারম্যানের এই বাহিনীর ভয়ে কেউ কোন কথা বলতে সাহস পায় না। এলাকা বাসী চেয়ারম্যান বাহিনীর কাছে জিম্মি।

ভুক্তভোগী হাসেমের স্ত্রী হোসনে আরা কান্না করে বলেন, লুৎফর চেয়ারম্যান আমাদের বাড়ি দখল করার চেষ্টা করছে দির্ঘদিন ধরে। আমার স্বামী চেয়ারম্যানের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আমার স্বামী ও আমাদের পরিবারকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আসছিল। গত মঙ্গলবার রাতে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে চেয়ারম্যানের নিজের বাড়িতে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। আমরা খবর পেয়ে চেয়ারম্যানের বাড়িতে গেলে আমাদের গেটের বাইরে বের করে দেয়। আমার স্বামীর হাত পা বাধা দেখি। তার মুখের উপর পা দিয়ে ধরে রেখেছে চেয়ারম্যান। আর তার দুই ছেলে রিপন ও মুমিন, বোরহান মেম্বার, শামীম মাষ্টার, আব্দুল হক, জাহিদ তাকে মারছে। আমার ৫ বছরের ছেলে কান্না করায় তাকে একটি চড় মারে। আমি লুৎফর চেয়ারম্যানের পা ধরে মাপ চাইলে তিনি আমাকে লাথি মেরে ফেলে দেয় এবং গেটের বাইরে বের করে দেয়। পরে পুলিশের সামনে জোরপূর্বক সাদা কাগজে সই নেয় এবং মামলা করলে আমার পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলারও হুমকি দেয়।

ভুক্তভোগী হাসেমের ১২ বছরের মেয়ে সামিয়া বলেন, আমার বাবাকে পাইপ দিয়ে মারছে। আমি কান্না করায় আমাকে মারছে। আমার বাবা এখন বাচবে কি না বলতে বলতে কান্না করতে থাকে।

হাসেমের ভাই মো: জাহের আলী আব্দুল আলিম বলেন, আমরা চেয়ারম্যানের মারের ঘটনা জানার পর তার বাড়িতে যাই। প্রথমে বাড়িতে ঢুকতে পারি নাই। গেট আটকানো। পরে ৯৯৯ এ ফোন দিলে পুলিশ আসে। পুলিশের সাথে আমরা বাড়ির ভিতর প্রবেশ করি। গিয়ে দেখি আমার ভাই মনে হয় মরে গেছে। তখন চেয়ারম্যান পুলিশের সামনে জোরপূর্বক সাদা কাগজে স্বাক্ষর করান সবাইকে। কিন্তু আমি স্বাক্ষর না করায় আমাকে মারদর করে। পরে জোর করে আমার স্বাক্ষর নেয় চেয়ারম্যানের লোকজন। আমরা কোন রকমে ভাইকে নিয়ে ইসলামপুর সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে আমাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্র নিতে বলে দ্বায়িত্বরত চিকিৎসক। পরে ভাইকে সাভার সুপার ক্লিনিকে ভর্তি করে ৩ দিন চিকিৎসা করাই। খরচ কুলাতে পারবো না ভেবে ভাইকে আজ শুক্রবার (৮ মার্চ) দুপুরে আবার ইসলামপুর সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করি। এখন সেখানেই চিকিৎসারত অবস্থায় রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, লুৎফর রহমান চেয়ারম্যান হওয়ার আগেও এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব করতো। তার একাধিক ইট ভাটা রয়েছে। জোরপূর্বক অন্যের জমির মাটি কেটে নিতো।ভয়ে কেউ কিছুই বলতে সাহস পায় না। হাসেমের উপর নির্যাতনে এলাকায় এখন থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সবাই মনে করছিল হাসেম মারা গেছে।

কুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান নির্যাতনের বিষয়টি অন্য দিকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি হাসেমকে নির্যাতনের বিষয়টিকে চুরি ও নারী সংক্রান্ত বিষয়ের দিকে নিয়ে যায়। কিন্তু ভুক্তভোগী হাসেমকে হাত পা বেঁধে নির্যাতন করা হয় এব কুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান নির্যাতনের বিষয়টি অন্য দিকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি হাসেমকে নির্যাতনের বিষয়টিকে চুরি ও নারী সংক্রান্ত বিষয়ের দিকে নিয়ে যায়। কিন্তু ভুক্তভোগী হাসেমকে হাত পা বেঁধে নির্যাতন করা হয় এবং তার বাম পা ও বাম হাত ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। কিন্তু চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান পুরো বিষয়টিকে চুরি ও নারী সংক্রান্ত বিষয়ের দিকে নিয়ে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করেন।

৯৯৯ এ ফোন দেওয়ার পর ঘটনাস্থলে যান ধামরাই থানার উপ- পরিদর্শক এস আই অসীম বিশ্বাস। তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি হাসেমকে মারধর করছে। তখন বললাম আপনারা তো মারতে পারেন না। ভুক্তভোগী যদি অপরাধ করে থাকে তার বিরুদ্ধে মামলা দেন। কিন্তু পরে ভুক্তভোগীর পরিবার তাকে নিজেদের জিম্মায় নিয়ে যান। বিষয়টি স্থানীয় ভাবে সমাধানের কথা বলা হয়েছে।

ট্যাগস

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

ধামরাইয়ে নিরাপদ সড়ক চাই শাখার কমিটি গঠন শপথ গ্রহণ আলোচনা সভা

হাত-পা বেঁধে হাসেম কে অমানুষিক নির্যাতন নেপথ্যে যারা

আপডেট সময় ০১:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ মার্চ ২০২৪

 

মোঃ ফারুক হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
ঢাকার ধামরাইয়ে একটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও প্যানেল চেয়ারম্যান, চেয়ারম্যানের দুই ছেলে জোর পূর্বক রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে চেয়ারম্যানের বাড়ির ভিতর গেট আটকে দিয়ে মারধর করার ঘটনা ঘটেছে। ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে ভুক্তভোগী হাসেমকে পরিবারের লোকজন উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করেন। মারধরের ঘটনায় ভুক্তভোগী হাসেম এখন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।

এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে উপজেলার কুল্লা ইউনিয়নের খাতরা গ্রামে চেয়ারম্যান লুৎফর রহমানের বাড়িতে।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী হাসেমের সাথে চেয়ারম্যান লুৎফর রহমানের জমি নিয়ে দির্ঘদিনের শত্রুতা চলছে। হাসেম নতুন বাড়ি করতে গেলে চেয়ারম্যান ও তার লোকজন জোর পূর্বক বাড়ি তৈরির কাজ বন্ধ করে দেন। তাকে বাড়ি ছেড়ে দিতে বলে চেয়ারম্যান। সেখানে নিজের বাবার নামে মার্কেট তৈরি করবে বলে জানান তিনি। হাসেম অসহায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলে হাসেম ও তার পরিবারকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আসছে। এলাকায় একটি ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করছে চেয়ারম্যান। নিজের রয়েছে একটি নিজস্ব বাহিনী।

জমি সংক্রান্ত পূর্ব শত্রুতার জেরে গত মঙ্গলবার ৫ মার্চ রাত ১০ টার দিকে বাড়ি ফেরার পথে হাসেমকে জোরপূর্বক রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে যায় চেয়ারম্যান লুৎফর রহমানের দুই ছেলে রিপন ও মুমিন, প্যানেল চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন, স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হক, জাহিদ ও খাতরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শামীম। হাসেমকে চেয়ারম্যানের বাড়িতে নিয়ে হাত পা মুখ বেধে তার উপর অমানুষিক নির্যাতন চালাতে থাকে চেয়ারম্যানের দুই ছেলে রিপন ও মুমিন, প্যানেল চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন সহ দলের সবাই। জোরপূর্বক তার বাড়ি ছেড়ে দিতে বলে। সেখানে চেয়ারম্যানের বাবার নামে মার্কেট করবে। দেশীয় অস্ত্র দিয়ে পিটিয়ে হাসেমের বাম পা ও বাম হাত ভেঙে গুড়ো করে দেয়। এছাড়াও তার কোমড়, মুখ, ডান পা পিটিয়ে ক্ষত বিক্ষত করে। শরীরের পিছনে পিটিয়ে চামড়া ছিড়ে যায় বলে জানান ভুক্তভোগী হাসেমের স্ত্রী। ৯৯৯ এ ফোন দিলে ঘটনাস্থলে পুলিশ যায়। আশ্চার্জের বিষয় পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লুৎফর চেয়ারম্যানের পক্ষ অবলম্বন করে বলে জানান ভুক্তভোগীর পরিবার। পুলিশের সামনেই হাসেমকে মারতে থাকে চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান, প্যানেল চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন,চেয়ারম্যানের ছেলে রিপন ও মুমিন এবং স্কুল শিক্ষক শামীম। ঘটনাস্থলে ভুক্তভোগী হাসেমের স্ত্রী ও ভাইয়েরা গেলে তাদেরও মারধর করে চেয়ারম্যান বাহিনী। পুলিশের সামনে জোরপূর্বক সাদা কাগজে স্বাক্ষর করায় চেয়ারম্যানের লোকজন। কিন্তু ভুক্তভোগী হাসেমের ভাই জাহের আলী বলেন, আমার ভাই তো মরে গেছে আমি স্বাক্ষর দিবো না বললে তাকেও মারদর করে চেয়ারম্যান। পুলিশ কিছুই না বলে চেয়ারম্যানের পক্ষ অবলম্বন করেন।
ভুক্তভোগী হাসেম উপজেলার কুল্লা ইউনিয়নের খাতরা এলাকার মৃত গোলাম আলীর ছেলে।

চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান ও প্যানেল চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিনের রয়েছে একটি নিজস্ব বাহিনী। লুৎফর রহমান চেয়ারম্যানের এই বাহিনীর ভয়ে কেউ কোন কথা বলতে সাহস পায় না। এলাকা বাসী চেয়ারম্যান বাহিনীর কাছে জিম্মি।

ভুক্তভোগী হাসেমের স্ত্রী হোসনে আরা কান্না করে বলেন, লুৎফর চেয়ারম্যান আমাদের বাড়ি দখল করার চেষ্টা করছে দির্ঘদিন ধরে। আমার স্বামী চেয়ারম্যানের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আমার স্বামী ও আমাদের পরিবারকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আসছিল। গত মঙ্গলবার রাতে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে চেয়ারম্যানের নিজের বাড়িতে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। আমরা খবর পেয়ে চেয়ারম্যানের বাড়িতে গেলে আমাদের গেটের বাইরে বের করে দেয়। আমার স্বামীর হাত পা বাধা দেখি। তার মুখের উপর পা দিয়ে ধরে রেখেছে চেয়ারম্যান। আর তার দুই ছেলে রিপন ও মুমিন, বোরহান মেম্বার, শামীম মাষ্টার, আব্দুল হক, জাহিদ তাকে মারছে। আমার ৫ বছরের ছেলে কান্না করায় তাকে একটি চড় মারে। আমি লুৎফর চেয়ারম্যানের পা ধরে মাপ চাইলে তিনি আমাকে লাথি মেরে ফেলে দেয় এবং গেটের বাইরে বের করে দেয়। পরে পুলিশের সামনে জোরপূর্বক সাদা কাগজে সই নেয় এবং মামলা করলে আমার পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলারও হুমকি দেয়।

ভুক্তভোগী হাসেমের ১২ বছরের মেয়ে সামিয়া বলেন, আমার বাবাকে পাইপ দিয়ে মারছে। আমি কান্না করায় আমাকে মারছে। আমার বাবা এখন বাচবে কি না বলতে বলতে কান্না করতে থাকে।

হাসেমের ভাই মো: জাহের আলী আব্দুল আলিম বলেন, আমরা চেয়ারম্যানের মারের ঘটনা জানার পর তার বাড়িতে যাই। প্রথমে বাড়িতে ঢুকতে পারি নাই। গেট আটকানো। পরে ৯৯৯ এ ফোন দিলে পুলিশ আসে। পুলিশের সাথে আমরা বাড়ির ভিতর প্রবেশ করি। গিয়ে দেখি আমার ভাই মনে হয় মরে গেছে। তখন চেয়ারম্যান পুলিশের সামনে জোরপূর্বক সাদা কাগজে স্বাক্ষর করান সবাইকে। কিন্তু আমি স্বাক্ষর না করায় আমাকে মারদর করে। পরে জোর করে আমার স্বাক্ষর নেয় চেয়ারম্যানের লোকজন। আমরা কোন রকমে ভাইকে নিয়ে ইসলামপুর সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে আমাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্র নিতে বলে দ্বায়িত্বরত চিকিৎসক। পরে ভাইকে সাভার সুপার ক্লিনিকে ভর্তি করে ৩ দিন চিকিৎসা করাই। খরচ কুলাতে পারবো না ভেবে ভাইকে আজ শুক্রবার (৮ মার্চ) দুপুরে আবার ইসলামপুর সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করি। এখন সেখানেই চিকিৎসারত অবস্থায় রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, লুৎফর রহমান চেয়ারম্যান হওয়ার আগেও এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব করতো। তার একাধিক ইট ভাটা রয়েছে। জোরপূর্বক অন্যের জমির মাটি কেটে নিতো।ভয়ে কেউ কিছুই বলতে সাহস পায় না। হাসেমের উপর নির্যাতনে এলাকায় এখন থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সবাই মনে করছিল হাসেম মারা গেছে।

কুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান নির্যাতনের বিষয়টি অন্য দিকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি হাসেমকে নির্যাতনের বিষয়টিকে চুরি ও নারী সংক্রান্ত বিষয়ের দিকে নিয়ে যায়। কিন্তু ভুক্তভোগী হাসেমকে হাত পা বেঁধে নির্যাতন করা হয় এব কুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান নির্যাতনের বিষয়টি অন্য দিকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি হাসেমকে নির্যাতনের বিষয়টিকে চুরি ও নারী সংক্রান্ত বিষয়ের দিকে নিয়ে যায়। কিন্তু ভুক্তভোগী হাসেমকে হাত পা বেঁধে নির্যাতন করা হয় এবং তার বাম পা ও বাম হাত ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। কিন্তু চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান পুরো বিষয়টিকে চুরি ও নারী সংক্রান্ত বিষয়ের দিকে নিয়ে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করেন।

৯৯৯ এ ফোন দেওয়ার পর ঘটনাস্থলে যান ধামরাই থানার উপ- পরিদর্শক এস আই অসীম বিশ্বাস। তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি হাসেমকে মারধর করছে। তখন বললাম আপনারা তো মারতে পারেন না। ভুক্তভোগী যদি অপরাধ করে থাকে তার বিরুদ্ধে মামলা দেন। কিন্তু পরে ভুক্তভোগীর পরিবার তাকে নিজেদের জিম্মায় নিয়ে যান। বিষয়টি স্থানীয় ভাবে সমাধানের কথা বলা হয়েছে।